কলাপাড়া উপজেলার উমেদপুর গ্রামের এক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী হচ্ছে বেল্লাল। তার দুটি হাত নেই। দুটি পা থকলেও নেই হাটু। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা এমন হলেও লেখাপড়ার প্রতি তার রয়েছে অধির আগ্রহ।
পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চক কিংবা পেন্সিল দিয়ে বেল্লালকে ছোটবেলা থেকেই লেখা শিখিয়েছেন মা হোসনেয়ারা বেগম। বাবা মো.খলিলুর রহমানও তাকে লেখাপড়া শেখাতে পিছিয়ে ছিলেন না। কাঁধে করে প্রতিদিন তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। বেল্লাল যাতে প্রতিদিন সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তার খেয়াল রাখেন তিনি।
বাবা-মায়ের ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষকদের সহযোগিতায় বেল্লাল এবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদরাসা থেকে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষার খাতায় লিখেছে সে ডান পায়ের আঙ্গুল দিয়ে। এভাবে সে অসাধ্যকে সাধন করে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মেধাবী বেল্লাল বলে, ‘আমি ল্যাহাপড়া কইরা একজন শিক্ষক অমু। শিক্ষক অইয়্যা কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিশুদের লেহাপড়া করামু। শিক্ষাগ্রহণ কইরা বঞ্চিত সকল শিশুদের পড়াইয়্যা দেশ দিয়া নিরক্ষরতা দুর করমু।’
চোখের পানি ছেড়ে বেল্লালের বাবা মো.খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি গরীব, আমার তেমন জমি জমা নাই। আনমেরা আমার পোলার লইগ্যা দোয়া করবেন। ও শিক্ষক অইতে চায়।’
মেধাবী বেল্লালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উমেদপুর দাখিল মাদরাসার সুপার মো. হাবিবুল্লাহ জানান, বেল্লালের মেধা আছে। নেই শারীরিক সক্ষমতা। পা দিয়ে লিখে এবছর জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই মাদরাসা থেকে ৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। সবাই পাশ করেছে। এছাড়া বেল্লালসহ ১০ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে সারা দেশে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৮২ জন। ৮টি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ২২ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩। যা গত বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।